কেমিক্যাল ব্যবসা করার বিস্তারিত নিয়ম কানুন-Chemical Business Ideas
কেমিক্যাল ব্যবসা, আমদানি রপ্তানি ব্যবসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা এটি। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সম্ভাবনাময় ব্যবসায় হলো কেমিক্যাল ব্যবসায়।
আমাদের ঘর-বাড়ি পরিষ্কারের জন্য যেমন কেমিক্যাল ব্যবহার করি, তেমনি বাজার থেকে যে খাবার কিনে আনছি সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কেমিক্যালের ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ আমরা চেষ্টা করব কেমিক্যাল ব্যবসার কিছু নিয়ম কানুন তুলে ধরতে।
কোথায় কেমিক্যাল ব্যবহার হয়?
আগেই বলে নিয়েছি দেশের এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে কেমিক্যালের ব্যবহার নাই। বিশেষভাবে বলতে গেলে, গার্মেন্টস শিল্প, ঔষধ শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকস, পরিষ্কারক সামগ্রী, এবং ষ্টেশনারী সামগ্রীতে এর ব্যবহার অপরিসীম। এদের মধ্যে গার্মেন্টস ও ঔষধ শিল্পে সবচেয়ে বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার হয়।
নিচে কেমিক্যালের চাহিদা সংক্রান্ত একটি লিস্ট দেয়া হলো।
১. স্পিনিং মিল- ৬৩/৬৫ টি
২. ফেব্রিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- ৭৪০/৭৫০টি
৩. ইয়ার্ণ মিল- ২৯২/২৯৫ টি
৪. ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং- ২৩৩/২৩৫ টি
৫. ফার্মাসিউটিক্যালস- ১২৫/১৩০টি
৬. অন্যান্য- কলম, সাবান ইত্যাদি- ১০০টি
উপরে উল্লেখিত সবগুলো সেক্টরে কেমিক্যালের ব্যবহার হয়।
কি ধরনের কেমিক্যালের চাহিদা আছে?
কেমিক্যালের চাহিদা কেমন ও কোথায় তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন খাতটি নিয়ে ব্যবসা করছেন। আপনার লক্ষ্য যদি হয় ঔষধ শিল্প তাহলে, সেসব কেমিক্যালের চাহিদা থাকবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে অবশ্যই চাহিদা ভিন্ন হবে।
দেশে সাধারণত, ডাইস্টাফ, প্রসেস, ডাই, পিগম্যান্ট, ন্যাপথল, টেক্সটাইল অক্সিলিয়ারি, অপটিকেল ব্রাইটনার, কেরামেল কালার, সিনথেটিক ফুড কালার, থিকনার, এডহেসিভ, এনজাইম, ল্যাব ও ফার্মা কেমিক্যাল
কেমিক্যালের দাম কেমন?
- সোডা ৫০ কেজি বস্তা = ১৬০০ টাকা
- সোডিয়াম সালফেট = ৭৫০ টাকা
- সোডিয়াম সিলিকেট ১৬ কেজি বস্তা = ১৩৫০ টাকা
- সোডিয়াম ফসফেট ২৫ কেজি বস্তা = ১০০০
- কালার দানা ২৫ কেজি বস্তা = ১৫০০ টাকা
- সিএমসি ২৫কেজি বস্তা = ২৩০০ টাকা
- থাইনোলিন ১০কেজি বস্তা = ২৭৫০ টাকা
এছাড়াও, বাজারে আরও বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল আছে, যাদের দাম তাদের পরিমাণ, আমদানি খরচের উপর নির্ভর করে এবং বাজার ভেদে পরিবর্তন হতে পারে।
কেমিক্যালের বাজার কোথায় আছে?
কলকাতার বড়বাজার- পরিষ্কারক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যালের মার্কেট।
মিটফোর্ড- ঢাকার নবাবপুর, মিটফোর্ডে আছে কেমিক্যালের বিশাল বাজার। দেশের ভেতর মিটফোর্ড ও কলকাতার কেমিক্যাল বাজার ব্যবহারের ব্যপারে গাইডলাইনও দিয়ে থাকে।
এছাড়া, কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে পাকিস্তান, চীন, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, জাপানের বাজারগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।
কেমিক্যাল ব্যবসায়ের শর্ত কি কি?
কেমিক্যাল ব্যবসায় সফলতার কিছু ধাপ রয়েছে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো।
১. চাহিদা নিরুপনঃ কেমিক্যাল ব্যবসার প্রথম ধাপটি হলো চাহিদা নিরুপন। একজন বিক্রেতা বা একজন সরবরাহকারী হিসেবে আপনাকে আগে জানতে হবে, বাজারে কোন ধরনের কেমিক্যালের চাহিদা বেশি। উপরে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বর্ণনা করা হয়েছে যা থেকে চাহিদা সহজেই নিরুপন করা যায়।
২. যোগান নিরুপনঃ কাদের থেকে কেমিক্যাল কিনবেন, বা কারা আপনার দেশে কেমিক্যাল সাপ্লাই দেয়। আপনি যদি নিজেই আপনার দেশের ভেতর একজন সাপ্লায়ার হতে চান তাহলে আপনাকে ভাবতে হবে আপনি কার থেকে কিনবেন। দেশে বসেই আলিবাবা থেকে কেমিক্যাল নিতে পারেন।
৩. বাজার যাচাইঃ অবশ্যই আলিবাবার ওয়েবসাইটে ঢুকে যে কারো কাছ থেকে কেমিক্যাল কিনে ফেলা মোটেও বুদ্ধিমানের হবেনা। বরং দু তিন জন সাপ্লায়ারের সাথে কথা বলতে হবে, দামাদামি করতে হবে, প্রয়োজনে কাস্টমারের দেয়া রিভিউগুলো পড়ে নিতে হবে।
৪. দেশের ভেতর বাজার যাচাইঃ আলিবাবা থেকে না নিলে দেশের ভেতর মির্টফোর্ড, নবাবপুরে রয়েছে কেমিক্যালের বিশাল বাজার। এখান থেকেও যাচাই বাছাই করে কেমিক্যাল নিতে পারে।
৫. আমদানির ব্যবস্থাঃ এক্ষেত্রে একটি লিখিত ডকুমেন্ট থাকা ভালো, যাতে উল্লেখ থাকবে দাম, পরিমাণ, পণ্য ডেলিভারির তারিখ। আমদানি খরচ কেমন পরবে এবং কে তা বহন করবে, আমদানির স্থান এসব বিষয়ও উল্লেখ থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৬. লাইসেন্সঃ আমদানিকারক হলে অবশ্যই আপনাকে আমদানি লাইসেন্স করে নিতে হবে।
৭. ক্রেতার সন্ধানঃ কেমিক্যাল আনার পর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে ক্রেতা খুঁজে বের করা। অনেক সময় চাহিদা নিরুপনের পরপরই এ ধাপটি আসতে পারে। এ ধাপে যারা এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে তাদের সাথে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
কথায় আছে, মোটামুটি তিন মাস আপনার কাছে থাকা কেমিক্যালের ব্যপারে কাস্টমারকে জানাতে হবে। আপনার কাছ থেকেই কেন কিনতে হবে, লাভ কি এসব বিষয় যেন ক্রেতার কাছে পরিষ্কার হয়।
৮. বিক্রয়ঃ ক্রেতার হাতে কেমিক্যাল পৌছে দেয়া এটাই এ ধাপের কাজ।
কেমিক্যাল ব্যবসায়ের কাগজপত্র
কেমিক্যাল ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। এগুলো হলো:
১. ট্রেড লাইসেন্স- আপনি আমদানি কারক হোন, কিংবা রপ্তানি কারক, কিংবা শুধুমাত্র সাপ্লায়ার হলেই ট্রেড লাইসেন্স লাইসেন্স লাগবে। এটি পাওয়া যাবে সিটি করপোরেশন অফিস থেকে। এই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসায় হয়না। ট্রেড লাইসেন্সের খরচ নির্ভর করে কোন জায়গার ব্যবসার জন্য লাইসেন্স করা হচ্ছে তার উপর। গ্রামে ট্রেড লাইসেন্স ইউনিয়ন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায় মাত্র ৩০০/৩৫০ টাকা দিয়ে। শহরে সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স করতে হলে ২,০০০ টাকা এর নিচে করা চায়না।
২. টিন সার্টিফিকেট- ঘরে বসেই আপনি নিজেই গুগলের মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট করা যায়, সাথে লাগবে এন আইডি কার্ডের কিছু ইনফরমেশন। টিন সার্টিফিকেট চেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর নিচের অংশের মাঝামাঝি একটা বারকোড থাকবে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো এই সার্টিফিকেট অন্যকে দিয়ে করালে বা দোকান থেকে করালে ৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে।
৩. ইন কর্পোরেশন সার্টিফিকেট- যারা পার্টনারশিপে ব্যবসা করবেন তারা বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই সার্টিফিকেট যোগাড় করবেন। তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্সের আগেই এটা নিতে হবে। এই ডকুমেন্টের ফি নির্ভর করে আপনার ব্যবসার অথরাইজড কেপিটালেরউপর।
৪. নামের ছাড়পত্র- আপনি যে নামটি দিয়ে ব্যবসা করছেন তার নামটা অন্যদের চেয়ে আলাদা কিনা সেটার একটা সাটিফিকেট লাগবে, এটাই হলো নামের ছাড়পত্র। ৩ নং এ উল্লেখ্য সার্টিফিকেটের জন্য এটা লাগবে।
৫. ব্যাংক একাউন্ট- ব্যবসার নাম দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। চেষ্টা করবেন একটা ভালো মানের ফি দিয়ে একাউন্ট খোলার। যদিও কত টাকা দিয়ে একাউন্ট করতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নাই এবং এই টাকাটা পরবর্তীতে আপনি ফেরত পেয়ে যাবেন।
৬. এক্সপার্ট-ইম্পোর্ট লাইসেন্স- অফিস অফ সি সি আই ই (অফিস অফ চিফ কন্ট্রোলার অফ এক্সপার্ট এন্ড ইম্পোর্ট) থেকে নিতে হবে। এদের ওয়েবসাইট থেকে আই আর সি, এ আর সি এর পেপার ডাউনলোড করে পূর্ণ করে একটি ফি সহ জমা দিলেই তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে লাইসেন্স হয়ে যাবে।
৭. চেম্বার অফ কমার্সের মেম্বার- এর জন্য টিন লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স আর ব্যাংক একাউন্ট লাগবে। প্রতি জেলায় একটি করে চেম্বার অফ কমার্স আছে। ৮০০ টাকা/১৫০০ টাকা এর মতো ফি লাগে মেম্বার হতে।
কেমিক্যাল ব্যবসা পুজি, লাভ-ক্ষতি কেমন?
কেমিক্যাল বাজারে দু ধরনের কথা প্রচলিত আছে। কারো মতে, এ ব্যবসা শূন্য মুলধনে শুরু করা যায় এবং দু তিন বছরের মধ্যে ভালো অবস্থানে চলে আসা যায়। আরেক ধরনের এক্সপার্টের মতে, কেমিক্যালের বাজারে ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে নামা উচিত।
যেহেতু কেমিক্যাল একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ, এর আনা, নেওয়া, সংরক্ষণ খুব সাবধানতার সাথে করতে হয়। আমাদের দেশে কেমিক্যালের গোডাউন থেকে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়।
সেক্ষেত্রে, উন্নত মানের কন্টেইনারে আনা-নেয়া, সংরক্ষণ, নিয়মিত গোডাউন পরীক্ষা করা, রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া থেকে দূরবর্তী স্থানে গোডাউন স্থাপন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যেহেতু কেমিক্যালের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের কাগজ পত্র ঠিক রাখা, আইনত বিধিনিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি বিষয় একটা সফল কেমিক্যাল ব্যবসায় দিতে পারে।
Code- SH11K 191
Written by Sharmin
আরো দেখুন
―পণ্য বেচা-কেনার টিপস
―নতুন পুরাতন পণ্য কিনুন
―চাকুরি খুঁজুন
Post Related Things:
Career guidance for students in Bangladesh, Education tips for job seekers, Skill development for better job prospects, Choosing the right educational path, Study tips and techniques for exams, College and university admissions in Bangladesh, Admission requirements and deadlines, কেমিক্যাল ব্যবসা করার বিস্তারিত নিয়ম কানুন
Latest admission news and updates , Choosing the right course or program , Career planning and development in Bangladesh, Job interview tips and techniques , Networking and professional skills , Building a successful career in Bangladesh , Advancing in your chosen field, Job opportunities in Bangladesh , Job portal in Bangladesh, Ways to Succeed in Online Business, কেমিক্যাল ব্যবসা, কেমিক্যাল ব্যবসা করার নিয়ম কানুন, কেমিক্যাল ব্যবসা করার নিয়ম কানুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
Leave a Reply